মিজানুর রহমান শমশেরী
ই-বুক
সম্পাদনা
খলিল মাহ্মুদ
ব্লগার সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
বসন্ত পরাগ
কবিতা
মিজানুর রহমান শমশেরী
সম্পাদনা
খলিল মাহ্মুদ
ব্লগার সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
প্রথম প্রকাশ : ই-বুক হিসাবে, ১৬ জুন ২০১৮
www.bookrix.com-এ প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২০
ই-বুকের স্বত্ব : সম্পাদক (খলিল মাহ্মুদ)
কবির ছবি : ফেইসবুকে কবির বন্ধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা
মোহাম্মদ বায়েজিদ মীর-এর টাইম লাইন থেকে নেয়া
সম্পাদক খলিল মাহ্মুদের প্রকাশিত বইসমূহ :
স্খলন, উপন্যাস, একুশে বইমেলা ২০০৩
অন্তরবাসিনী, উপন্যাস, একুশে বইমেলা ২০০৪
খ্যাতির লাগিয়া, উপন্যাস, একুশে বইমেলা ২০০৪
সুগন্ধি রুমাল, ছোটোগল্প সংকলন, একুশে বইমেলা ২০০৪
অন্বেষা, কাব্যগ্রন্থ, একুশে বইমেলা ২০০৫
আই-ফ্রেন্ড, উপন্যাস, একুশে বইমেলা ২০০৫
রীতু আরাশিগে, অণু-উপন্যাস, একুশে বইমেলা ২০০৬
নিঃসঙ্গ সময়ের সুখপাখি, কাব্যগ্রন্থ, একুশে বইমেলা ২০০৭
অসম্পর্কের ঋণ, কাব্যগ্রন্থ, একুশে বইমেলা ২০১৫
কালের চিহ্ন, ছোটোগল্প সঙ্কলন, একুশে বইমেলা ২০১৬
সম্পাদক খলিল মাহ্মুদের ই-বুক সমূহ :
আজগুবি ছড়া, ছড়া, ২৬ মার্চ ২০১৮
ক্ষণজন্মা অপাঙ্ক্তেয়রা, কবিতা, ২৮ মার্চ ২০১৮/০১ এপ্রিল ২০১৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, কবিতা, ০১ এপ্রিল ২০১৮
অয়োময় সুপুরুষ, কবিতা, ৩১ মার্চ ২০১৮/০১ এপ্রিল ২০১৮
সোনালি, কবিতা, ০২ এপ্রিল ২০১৮/০৩ এপ্রিল ২০১৮
লৌকিক রহস্য; অথবা অলৌকিক, উপন্যাস, ০৩ এপ্রিল ২০১৮
তারকাজরিপ ব্লগীয় রঙ্গ, রম্যরচনা, ০৫ এপ্রিল ২০১৮
সুচিত্রা সেন, রম্যকবিতা, ০৬ এপ্রিল ২০১৮
"ওরই লাবণ্যে ভরে যেত আমার সুশুভ্র হৃদয়-কান্তার
ও আমার চিরচেনা। যৌবনের অদম্য উৎসাহ।
তাই এই নিঃসঙ্গতায় নির্জন কুটির হতে
পাঠিয়ে দিলাম রক্তিম অভিবাদন।"
কবিতা : রক্তিম অভিবাদন, মিজানুর রহমান শমশেরী, জীবন যন্ত্রণা
অশ্রুমালা, কাহিনিকাব্য,৭০-এর দশকে প্রকাশিত (সুনির্দিষ্ট সাল বা অন্যান্য
তথ্য সম্পাদকের জানা নেই)
সম্পাদক যে পাণ্ডুলিপি থেকে ‘জীবন যন্ত্রণা’ সংগ্রহ করেছেন,
সেই পাণ্ডুলিপিতে নীচের বইগুলোর নাম ছিল :
জীবন যন্ত্রণা, কাব্য
বসন্ত পরাগ, কাব্য
একাত্তরের চিঠি, কাব্য
শিকল ভাঙার গান, গান
হিজলফুলের মালা, কাহিনিকাব্য
সবগুলো বইতে সর্বমোট ১৩৭টি কবিতা, ৪০টি ছড়া ও ৫২টি গান রয়েছে।
কবি মিজানুর রহমান শমশেরী (ডাকনাম আব্দুল মালেক) ৮ই কার্তিক ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে) ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার অন্তর্গত সুতারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৯ আষাঢ় ১৩৮৮ বঙ্গাব্দে (১৪ জুলাই ১৯৮১) হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে প্রয়াত হোন। তাঁর পিতার নাম শমশের উদ্দিন। সর্বজ্যেষ্ঠা এক বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে শমশেরী ছিলেন পঞ্চম।
একান্ত কৈশোর থেকেই লেখালেখির প্রতি শমশেরীর আগ্রহ গড়ে ওঠে। সাহিত্য সাধনা ও সাহিত্যচর্চা ছিল তাঁর প্রাণ। স্কুল-কলেজের বন্ধুবান্ধব ও এলাকার তরুণ-কিশোরদের নিয়ে গড়ে তোলেন সাহিত্যচর্চা বিষয়ক আসর ‘পদ্মাপার খেলাঘর’। এর পূর্বে আদমদজী নগরের ‘অগ্নিকন্যা খেলাঘর’ আসরের সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে তিনি তাঁর খেলাঘর জীবন শুরু করেন
শমশেরী ৭০ দশকের কবি। ধূমকেতু, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সমাচারসহ তদানীন্তন গুটি কতক জাতীয় দৈনিকের সবকটাতেই এবং অন্যান্য লিটল ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে তিনি নিয়মিত লিখতেন। দৈনিক বাংলার বাণীতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন।
তাঁর জীবদ্দশায় একটিমাত্র কাহিনিকাব্য ‘অশ্রুমালা’ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির আয়তন সুবিশাল।
শমশেরীর ছোটোভাই রমিজ উদ্দিনই তাঁর ভাইদের মধ্যে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। কবির ঘনিষ্ঠ ও সারাবেলার সঙ্গী, বয়োকনিষ্ঠ দুই শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্ত কাজী বায়েজিদ হোসেন ও মোঃ জাহিদুল ইসলাম খানের (ওরা দুজন আমার সহপাঠী। জাহিদ ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন) মাধ্যমে বহুদিন পর্যন্ত চেষ্টা করার পর রমিজ ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তাঁর কাছ থেকে আমি যা যা গ্রহণ করি তা হলো কবির স্বহস্ত-লিখিত ও তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ বন্ধু জনাব মোহাম্মদ বায়েজিদ মীর-এর চিত্রাংকনসমৃদ্ধ একটি বিশাল পাণ্ডুলিপি (জনাব মোহাম্মদ বায়েজিদ মীর স্থানীয় গাজীরটেক প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা) ও কবির মৃত্যুর পর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত শোক-বার্তার ফটোকপি। ২০ আগস্ট ১৯৮১ তারিখে দেওয়ান আবদুল হামিদ (সাহিত্যরত্ন) এম.এ.-এর সভাপতিত্বে মগবাজারস্থ বাংলাদেশ সাংবাদিক পরিষদে কবির ওপর স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের প্রচারপত্রের একটি ফটোকপি আমাকে দেয়া হয়। আর দেয়া হয় কবির একটি সাদাকালো পাসপোর্ট আকারের ছবি।
রমিজ ভাইয়ের হাতে এই পাণ্ডুলিপিটি দেখামাত্রই আমার মনে পড়ে যায়, কবির মৃত্যুর দ্বিতীয় বা তৃতীয় বৎসরে এটি খুব সম্ভবত এক দিনের জন্য আমার কাছে রাখার সুযোগ পেয়েছিলাম, একটি অনুষ্ঠানে তাঁর কবিতার ওপর আলোচনার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য। পৃষ্ঠা উলটে আমার সে সময়ে ভালোলাগা কিছু কবিতা খুঁজতে থাকি। কিন্তু সারা পাণ্ডুলিপি খুঁজেও তা পাই না। তখনই রমিজ ভাই বলেন, দেশের বাড়িতে এর চেয়েও বড়ো বড়ো আরো অন্তত দুটি পাণ্ডুলিপি আছে, পত্রিকার কাটিং বোঝাই করা বাক্স আছে। আমার ভুল ভাঙে, বিশ বছর আগে দেখা সেই পাণ্ডুলিপি এটি নয়।
এই পাণ্ডুলিপিতে যে বইগুলোর নাম উল্লেখ আছে তা হলো : জীবন যন্ত্রণা, বসন্ত পরাগ, একাত্তরের চিঠি, শিকল ভাঙার গান (গান) ও হিজলফুলের মালা (কাহিনিকাব্য)। এখানে রয়েছে সর্বমোট ১৩৭টি কবিতা, ৪০টি ছড়া ও ৫২টি গান।
শমশেরীর কবিতায় কঠিন জীবনযুদ্ধ ও ঘাত-প্রতিঘাতের এক চরম নিষ্ঠুর বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছিল।
আগেই বলেছি, শমশেরী ৭০ দশকের কবি। নির্মাণ ও বিষয়-বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই সময়ের কবিতার সাথে আজকের দিনের কবিতার বিস্তর ব্যবধান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর কবিতাগুলো অত্যন্ত আধুনিক, সতেজ, সজিব, সাবলীল ও প্রাণবন্ত – মনে হয়, এই মাত্র কবিতাটি লিখে কবি টেবিল ছেড়ে উঠলেন। গান ও ছড়া রচনায়ও কবির দক্ষতা ছিল খুব উঁচু মানের।
রমিজ ভাইয়ের কাছ থেক আনা পাণ্ডুলিপিটি রমিজ ভাই তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে আমার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।
২০০২ সাল থেকে আমরা ক্লাসমেটরা ‘সবুজ অঙ্গন’ নামে একটা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে থাকি। শমশেরীর পাণ্ডুলিপি আমার হাতে আসার পর থেকেই ওখান থেকে সবুজ অঙ্গনে নিয়মিতভাবে কবিতা, গান ও ছড়া প্রকাশ করতে থাকি। ২০০৫ সালে ‘সবুজ অঙ্গন অণুগ্রন্থ সংকলন’-এ ‘নির্বাচিত ছড়া ও কবিতা’ শিরোনামে শমশেরীর একগুচ্ছ ছড়া-কবিতা ছাপা হয়।
খলিল মাহ্মুদ
সম্পাদক
তুমি কি আমার কথা ভাবো?/১২
তুমি চলে গেছো/১৪
শেষের কবিতা/১৫
তোমার চিঠি/১৮
শেষ চিঠি/১৯
ছন্দপতন/২২
ভাবান্তর/২৪
একলা ডাকে পাখি/২৫
সন্ধ্যাস্মৃতি/২৭
ক্ষণিকা/২৯
তোমার জন্য/৩১
এমন যদি হতো/৩৩
প্রশ্বাস/৩৪
স্মরণিকা/৩৫
বিস্মৃত গান/৩৬
অশ্রুমালিকা/৩৮
সূচনা/৪০
ব্যথার দান/৪১
সমাধান/৪২
হারিয়ে যাওয়ার পালা/৪৩
ফুল/৪৫
যদি বলো/৪৬
শেষ কবিতা/৪৭
চোখের জল/৫০
দুটি মন/৫২
এই মাটি এই মন/৫৪
ধান ক্ষেত : তুমি আর আমি/৫৫
মেঘ/৫৬
হতাম যদি/৫৭
পাঠকের প্রতি/৫৮
তুমি কি আমার কথা ভাবো?
কঠিন প্রাচীরে কান পেতে শুনি
মুক্তির দিন একদিন আসবেই
সেইদিন তোমাকে আবারো কাছে পাব।
যেখানে সূর্যের সোনালি বিচ্ছুরণ
এখনো হোঁচট খায়
পড়ন্ত বিকেলের বসন্ত যৌবনে
যেখানে ধ্বনিত পাখির কাকলি
প্রাচীরের বাঁধ ভেঙে চলে যাব
তুমি আর আমি পায় পায়
সেই নির্জনতায়।
রাত্রির নিঃসঙ্গতায় একা জেগে আছি
আমার চোখে নেই ঘুম,
চোখের সামনে প্রাচীরের গায়
স্বপ্নের পাখিগুলো ডানা ঝাপটায়
মুক্তির অন্বেষা খুঁজিতেছে পথ
সুপুষ্ট মৌসুম।
এখনো আমার চোখে নেমে আসে
সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশ,
পলাশের লাল রঙে রঙিন পদ্মাপার
পারভাঙা তীরে নব কিশলয়ে
পালতোলা নায়ে স্বচ্ছ সলিলে
গোধূলির সুস্পষ্ট প্রকাশ।
এই নির্জনতায় বসে বসে ভাবি
আবারো তোমায় কাছে পাব
গানে আর কবিতায় কাটাবো প্রহর
মধুরাত এনে দিবে চাঁদের সুষমা
তারার মালিকা গেঁথে কবরী সাজাবো।
তুমি কি আমার কথা ভাবো?
তুমি চলে গেছো
তাই চলে গেছে স্বপ্নের সে দিনগুলি
তুমি চলে গেছো
তাই দূরে সরে গেছে সন্ধ্যা-গোধূলি।
মেঘের পরতে
লিখা আছে শুধু বাতাসে উড়ানো বেগ
তুমি চলে গেছো
তাই বুঝি আর আসে নি শ্রাবণ মেঘ।
ওই বনপথ
রেখে দিয়েছে আজো বিদায়ী চরণ লিখা
জোনাকি মেয়েরা
তাই বুঝি আর জ্বালে নি প্রদীপ শিখা।
তুমি চলো গেছো
ঝরে গেছে তাই কুসুমের হাসি মুখ
তুমি চলে গেছো
ভরে আছে তাই বেদনায় কচি বুক।
তুমি চলে গেছো
তাই বুঝি আর কলামুচা সেই পাখি
কদলী বনের
ধার ঘেঁষে আর করে নাই ডাকাডাকি।
এই দেখা যদি শেষ দেখা হয়
তবে কেন আসিলাম,
ভালোবাসা যদি বেদনাই হয়
কেন ভালোবাসিলাম।
ফুটিবার আগে যদি ঝরে ফুল
কী হবে প্রহর গুনে,
জানিবার আগে যদি যাই ভুলে
কী হবে কাহিনি শুনে!
আকাশ জেনেছে চাঁদের সুষমা
সাগর জেনেছে পানি,
তুমি যে আমার এত কাছাকাছি
তবু নেই জানাজানি।
রাতের আকাশে চাঁদের মরীচি
যখন সুষমা আনে
সাগরের জল পারভাঙা তটে
কথা কয় কানে কানে।
সারা তপোবন ঘুমায় যখন
রাত্র গভীর হলে
নিমতলা থেকে ডাক দেয় পাখি
‘বউ কথা কউ’ বলে।
বহুদিন হতে সে ডাকে আমার
দু চোখে এসেছে নিদ
সেই ফাঁকে এসে জানি না কখন
কেটেছো মনের সিঁদ।
লুটে নিয়ে গেছো তনু-মন-প্রাণ
জীবনের যত ধন
সব নিয়ে গেছো, রেখে গেছো শুধু
ব্যথা আর ক্রন্দন।
হাতের বাঁশরি বাজে না তো আর
তালছাড়া হয়ে যায়
সুরের লহরি আসে না তো আর
আজিকার কবিতায়।
শেফালি কুসুম আতিয়া যখন
শুনিবে সকল কথা
ওদের চোখেতে যদি আসে জল
কোথা রবে মানবতা!
বিরহবেদনা বুকে নিয়ে যদি
আমারই সময় কাটে
একবারও তুমি কাঁদিবে না এসে
সেই পুকুরের ঘাটে!
যেখানে রয়েছে কচুরি ফুলেরা
লাজুক বঁধুয়া বেশে
হংসমিথুন জলকেলি করে
প্রতিদিন যথা এসে,
সন্ধ্যা কি কভু নামিবে না আর
সোনালি ধানের শিষে?
এতটুকু স্মৃতি রহিবে না বুঝি
জীবনের সাথে মিশে।
সবকিছু তুমি ভুলে যেতে পারো,
পারিবে কি ভুলে যেতে
আসবে যখন নিশিজাগা চাঁদ
তোমাদের আঙিনাতে?
মনের বনেতে মন হারাবার
এসেছিল যত রাত
বহু রজনির একটি প্রমাণ
ঘুমভাঙা ওই চাঁদ।
আমি চলে যাব- বহু দূরে যাব,
আসিব না কোনোদিন,
দু ফোঁটা চোখের জল ফেলে ওগো
শোধ করে যাব ঋণ
তোমার চিঠি পেলাম :
আজকে বিকেলে মনের খেয়ালে
যখন ইঁদারার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তোমার চিঠিতে খুলে ছিল স্মৃতির সিংহদ্বার,
বের হয়ে এলো সহস্র স্মৃতির বলাকা,
সম্মিলিত পাখার প্রভঞ্জনে
বাঁধ ভেঙে গেল কল্পনার।
কৃষ্ণচূড়ার শাখে
আর পলাশের লাল গুচ্ছে
খুঁজে পেলাম তোমার চিঠির ভাষা,
নতুন ঠিকানায় নতুন শহরে তুমি লিখছো
তুমি লিখছো অনেক অনেক কথা।
অনেক আশার একটু ফসল
তোমার কাছে পাঠিয়ে দিলাম
এটাই আমার শেষ চিঠি;
অনেক রাতের আশার স্বপন
জড়িয়ে ছিল জীবন পাতায়
কবিতা আর গানের খাতায়
আজ থেকে সব মুছে দিলাম
ভুলেও যদি আর ডাকি
এটাই আমার শেষ চিঠি।
তোমার কথা যদিই মনে পড়ে
দেখবো চেয়ে রাতের আকাশ
যেখান থেকে জ্যোৎস্না এসে ঝরে
মরুর বুকে সাগর তীরে,
তোমার কথা যদিই মনে পড়ে
ছুটে যাব তেপান্তরের মাঠে
আনবো খুঁজে দুঃসাহসে
ঝিনুক থেকে মুক্তা চিরে চিরে।
আর যাব না আলভাঙা সেই মাঠে
যদিও যেতাম তোমার সাথে
সূর্য যেথা হোঁচট খেয়ে পড়ে
সন্ধ্যা হলে রঙের ফসল এনে
কচি ধানের পাতার শিহরণে
আপনা হতেই জীবন জাগে
ভুল করেও আর যাব না
ক্লান্ত বিকেল যদিও নিবে টেনে।
তুমিই যখন রইলে না আর পাশে
কী হবে আর ওসব দেখে
আঁখির পাতায় স্বপ্ন এঁকে
দু চোখে মোর ক্লান্তি নেমে আসে,
নিজের কাছে নিজেই বাধা মেনে
সীমার মাঝে আটকে র’ব
ভাববো তুমি কেউ ছিলে না কভু
যখন তুমি রইলে না আর পাশে।
কথা দিলাম থাকবো না আর
তোমার পথের কাঁটা হয়ে
জীবন পথের যথাতথা
একলা চলে যেয়ো চলন্তিকা,
দেখেও তোমায় ডাকবো না আর
ক্ষণিক দেখে পথের পাশে
নাইবা হলো পুনঃ জানাজানি
ভাববো তুমি চির-অনামিকা।
এইটুকুই চাই তোমার কাছে
তোমায় যেন ভুলতে পারি
এমন আশীষ করে যেয়ো
যখন আমি ভুলেই গেলাম,
ব্যর্থ রাতের স্বপ্ন দেখে আর কী হবে?
তারার আকাশ মেঘে ঢাকা
আঁধার ঘেরা শূন্য পৃথিবীতে
আমিই শুধু অবাক পেলাম।
আমার কথা নাইবা যদি বোঝো
আহা! তবে কেমন করে
বুঝিয়ে বলি,
দেখছো না এই মধু মাসে
কেমন করে কেটে গেল
স্নিগ্ধ মধুর রাতগুলি।
তুমি যে মোর এত কাছাকাছি
ফাগুন এসে চলেই গেল
তবু যে নেই জানাজানি,
আহা! তুমি শুনছো না ওই
হাসনাহেনার শাখায় শাখায়
মৌমাছিদের কানাকানি।
ইচ্ছে করে চাঁদনি রাতে
তোমার কোলে মাথা রেখে
ঘুমিয়ে থাকি,
হাজার রাতের স্বপ্ন নিয়ে
তন্দ্রাহারা দুটি চোখে
রঙিন মধুর স্বপ্ন আঁকি।
আহা! তুমি বুঝলে না যে
ইচ্ছে আমার, তোমায় আমি
নিবিড় করে কাছে টানি,
এমন রাতে ঘুম পাবে কি!
আহা! তুমি শুনছো না ওই
মৌমাছিদের কানাকানি।
চাঁদ : তুমি অমন করে মিষ্টি হাসি আর হেসো না,
কুসুম : তুমি পরাগ মেখে অমন ভালো আর বেসো না।
সকল সুখের পায়রাগুলো উড়িয়ে দি’ছি অস্তাচলে,
রাতের সকল স্বপ্নগুলো ভাসিয়ে দি’ছি চোখের জলে।
নূপুর : তুমি রুনুঝুনু অমন তালে আর বেজো না,
সন্ধ্যা : তুমি রক্তরাগে অমন সাজে আর সেজো না।
বসন্তের এই বসুন্ধরায় কোকিল ডাকা কুহু স্বরে,
আহত মোর গানের পাখি অনেক ব্যথায় কেঁদে মরে।
জ্যোৎস্না রাতে একলা ডাকে পাখি,
‘বউ কথা কও’, বটের শাখে নিদ্রাবিহীন আঁখি।
এমন রাতে নেই যে কাহার নিদ!
জানি না তার নিদমহলে কাটলো কে বা সিঁদ।
একলা পাখি ডাকে বটের শাখে,
আগুনজ্বলা ফাগুন রাতে মেঠো পথের বাঁকে।
ফুলের বনে জুঁই চামেলির মেলা,
গোলাপ ডালে মৌমাছিদের খেলা।
স্তব্ধ নিঝুম রাত-
ঘুমিয়ে গেছে বেঁতুল বনে জোনাকিদের ঝাঁক।
ক্লান্ত চাঁদের জ্যোৎস্না এসে ঝরে,
ঝিকিমিকি মুক্তো ঝরা তপ্ত বালুর চরে।
ঘুমিয়ে গেছে বাঁশবাগানে শালিক পাখির ঝাঁক,
থেমে গেছে আমবাগানে হুতোম পেঁচার ডাক।
ঘুমিয়ে গেছে নব-বধূর ক্লান্ত দুটি আঁখি,
এমন রাতে একলা ডাকে পাখি।
জানি না তার মনের কথা, চাঁদ বুঝিবা জানে,
তাইতো এমন রাতে
একলা চাঁদের সাথে
সাথিহারা জেগে আছে ব্যথা ভরা প্রাণে
আমি জানি না তার মনের কথা, চাঁদ বুঝিবা জানে।
আকাশেতে দুলছে দোদুল চাঁদ,
অনেক ব্যথায় কাঁদরে পাখি কাঁদ।
কান্না শুনে যদিই বা তোর হারিয়ে যাওয়া ধন,
একটু এসে পাশে বসে ভুলতে কতক্ষণ।
কিন্তু পাখিরে…
হারিয়ে পাওয়ায় দুঃখ ভোলা যায়
পেয়েও হারায় যে…
তার কথা কি কেউবা মনে রাখে!
ফাগুন বনে একলা পাখি ডাকে।
ওই দূর বন রাঙায়ে গগন সন্ধ্যা যখন আনে,
তখন আমার হৃদয়-বিহগ বিভোর পীযূষ গানে।
সন্ধ্যাকে আমি বড়ো ভালোবাসি যখন সন্ধ্যা নামে,
মনে হয় সেই মেঘলা গোধূলি আবার এসেছে গ্রামে।
স্মৃতির পরশ দোলা দেয় মনে, বিস্মৃত ইতিহাস,
খুঁজে ফিরি হায় আঁখির তারায় এলো বুঝি মধুমাস।
সেই কবেকার কথা, চলে গেছো দূরে, মনে নেই আজ আর,
চরণচিহ্ন রেখেছে সন্ধ্যা বিস্মৃত আলেয়ার।
সেই মনে পড়ে রাতের আঁধারে জোনাকি মেয়ের সনে,
ঝিঁঝিরা বাজাতো ঘুমের নূপুর সন্ধ্যার আগমনে।
জুঁই চামেলির মঞ্জুষা নিয়ে জাগিত যখন বন,
কৃষ্ণচূড়ার রঙিন শাখারা দোলা দিয়ে যেত মন।
শেফালি মালতি রজনিগন্ধা বাতাসে বোলাতো বেগ,
তোমার আমার হৃদয়-আকাশে ডাকিত শ্রাবণ মেঘ।
সেই নিমতলা যেখানে রচিত তোমার আমার অভিসার,
শরতের চাঁদ চুমু খেয়ে যেত কেঁপে কেঁপে বার বার।
তোমাকে আমার এত কাছে পেয়ে কত ছিল অভিলাষ,
আকাশের গায় আজো আছে লিখা সেইসব ইতিহাস।
তুমি আজ কাছে নেই তবু তো সন্ধ্যা পেতেছে আঁচল,
তবু তো ডাকিছে বিহগ বিহগী মহুয়া মেলেছে দল।
শরতের চাঁদ সন্ধ্যা আকাশে রঙিন মেঘেতে নেয়ে,
কানাকানি করে কত কথা বলে শিউলিরে কাছে পেয়ে।
ভাঙা নদীতটে বকুলের শাখে ‘বউ কথা কউ’ স্বরে,
বঁধু হারানোর ব্যথা নিয়ে বুকে আজো পাখি কেঁদে মরে।
আহত মনের গানের পাখিরা বার বার বাধা পায়,
তবু তো মনের রঙিন স্বপনে দূর পথে উড়ে যায়।
তৃষ্ণিত আকাশ ঢালিছে সুষমা সন্ধ্যার আহ্বানে,
তোমার সে গান শুনিতেছি তাই বাতাসের কানে কানে।
সন্ধ্যার কাছে খুঁজে পাই আমি জীবনের যত কথা,
তাই বুঝি মোর এত ভালো লাগে সন্ধ্যার নীরবতা।
আঁচল উড়ায়ে নদীতটে এলো
কোন সে উদাসী মেয়ে!
তেতালার ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
তাই দেখি চেয়ে চেয়ে।
ভাঙা নদীতটে নব কিশলয়ে
এলো বুঝি মধুমাস,
ভীরু কালো চোখে মনে হয় যেন
আমাকে করিবে গ্রাস।
প্রেয়সী বধূর বুকের পরশ
লেগে আছে বুঝি গায়,
খোঁজে অভিসার ভাঙা নদীতটে
মিলনের অভিপ্রায়।
ছলছল নদী বয়ে চলে যায়
বাতাসে ওড়ায় হিয়া,
আশ্বিনী মেঘে লুকোচুরি খেলে
কোন সে অজানা প্রিয়া।
মনে হয় যেন কতকাল ধরে
চিনি গো তাহারে চিনি,
যুগ যুগ ধরে শুনে আসা ওই
কাঁকনের রিনিঝনি।
বাতাসে ওড়ায় সুরভি মধুর
অজানা বধূর চুল,
উদাসী মনের প্রণয় স্বপন
ভরে দেয় আঁখিকূল।
আমি একটা কবিতা লিখবো
একটা কবিতা,
যে কবিতায়
বসন্তে ফুটবে ফুল
অতন্দ্র ভীমরুল
ছুটবে যূঁথিকার বনে
মধু ফাল্গুনে
গাইবে সঙ্গীতা।।
আমি একটা ছন্দ লিখবো
একটা ছন্দ
যে ছন্দে
চাঁদের হাসিতে ধরা
পীযূষ প্রবাহ ভরা
বিহগে দিবস শর্বরী
রাখিবে ধরি
কুসুমে সুগন্ধ।।
আমি একটা গান লিখবো
একটা গান,
যে গানে
ভাঙবে নিশুতি রাত
আনবে নব প্রভাত
সোনালি স্বপন ভরা
আকুল করা
এ হৃদয় প্রাণ।।
এমন যদি হতো-
আমার বুকের আগুন দিয়ে
তোমার বুকের ফাগুন জি’য়ে
আমার চোখের অশ্রুধারা
তোমার চোখে ফুল ফোটাতো,
এমন যদি হতো!
হয়ত সেদিন তোমার বনে
জাগতো জোয়ার আপন মনে
প্লাবনে তার ভেসে যেত
অনাগত- ভাগ্যহত,
এমন যদি হতো!
তখন কি আর মনে হতো
আমার কথা আগের মতো
ঘুমিয়ে থাকা ঝিমিয়ে থাকা
স্বপন মাখা হৃদয় রত,
এমন যদি হতো!
আমার কথা বুঝবে না, জানি তুমি বুঝবে না,
চোখের জলে হৃদয়তলে ফুটলো যে ফুল
জানি তা কেউ খুঁজবে না।
আমার কথা বুঝবে না, জানি তুমি বুঝবে না।।
আমার সকল কুড়িয়ে পাওয়া মুক্ত হাওয়ায় এই আবরণ,
ঘোমটা পরে লুকিয়ে আছে আত্মভোলার অন্তঃকরণ।
আপন গানে আপনি বিভোর, জানি সে গান শুনবে না
ফুটলো ক’টি পদ্মকুসুম হৃদয়-সরোবরে
জানি তা কেউ গুনবে না।
আমার কথা রাখবে না, জানি তুমি রাখবে না
চিত্ত যেদিন শুকিয়ে যাবে, নিত্য আঁখি উঠবে কেঁদে
জানি সেদিন আমার পাশে থাকবে না।
আমার কথা রাখবে না, জানি তুমি রাখবে না।।
সাধ যে ছিল তোমার কাছে অনেক কিছু চাওয়া-পাওয়া
তোমার কাছে তাইতো আমার এমন করে আসা-যাওয়া
ব্যর্থ কবির একটু স্মৃতি জানি তুমি রাখবে না
চিত্ত যেদিন শুকিয়ে যাবে নিত্য আঁখি উঠবে কেঁদে
জানি সেদিন আমার পাশে থাকবে না।।
ক্রমশ ক্লান্ত কোকিলের ডাক যখন থেমে যাবে
মধ্যাহ্নের দীপ্ত রবি বিস্ময়ে যখন চেয়ে রবে
শ্যামল মাটির প্রান্তে, পৃথিবী যখন হারাবে
সকল সুষমা, তখনো তোমার কথা মনে হবে।
বর্ষার অবিশ্রান্ত বারিধারা যখন হবে শেষ
পত্র-পল্লবে যখন কোনো শিহরণ জাগবে না
সতত কল্পনা হারাবে মনের রঙিন আবেশ
তখনো হে প্রিয়তমা, অনেক দূরে থাকবে না।
অথবা তোমার কথা মনে হবে, যখন পৃথিবী
শীতের কাঁপন লেগে ক্রমশ স্থবির হয়ে রবে
শীতের হিমেল বায়ে লুটে নিবে মালতি করবী
শেফালি, তখনো তোমার কথা আমার মনে হবে।
এখনো অনেক রাত
আকাশে দুলিছে চাঁদ
পৃথিবীর কোলাহল স্তব্ধ স্থবির,
এখনো ফোটে নি ফুল
মধুবনে ভীমরুল
এখনো ছোটে নি কেউ রাত্র গভীর।
চাঁদের মরিচী মেখে রাতের শিশির,
ঝরিতেছে মহোৎসবে আজি এ নিশির।
পাখিরা ঘুমিয়ে আছে যে যার কুলায়
তরুশাখে পুষ্পরাজি
ঘুমিয়ে পড়েছে আজি
এমন নিশুতি রাতে দোদুল দোলায়।
ঝরিছে অমৃত ধারা প্লাবিয়া গগন
চাঁদের সুষমা মেখে এ মধু লগন
করিতেছে মধুময়
সঞ্চারি স্নিগ্ধমলয়
দিকে দিকে প্রকাশিছে সুখের বারতা
নিঝুম নিশুতি রাতে সয়ে নীরবতা।
সমস্ত পৃথিবী হায় ঘুমে অচেতন
ব্যর্থতা বুকে টেনে এ দুটি নয়ন
হৃদয় মাধুরী দিয়া
কেবল খুঁজিছে প্রিয়া
একদা যে ফুটেছিল শত প্রেম প্রীতি
হারানো দিনের সেই স্মৃতি বিস্মৃতি।
কী মায়া মমতাময় বিরহিত হিয়া
কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে নয়ন প্লাবিয়া
ঝরে পড়ে অশ্রুজল
হৃদয়ের শতদল
সহসা নিলয় হয় সহসা ফুটিয়া
আজি এ নিশুতি রাতে বিরহিত হিয়া।
প্রথম দিনের রেশ আজো বাজে প্রাণে
বাতাসে মিলায় সুর অশান্ত গানে
কী যেন কী মনোরথে
পৃথিবীর যুগপথে
শতধা হৃদয় নিয়ে ছুটি সন্ধানে
প্রথম দিনের রেশ আজো বাজে প্রাণে।
কে তুমি বালিকা!
বনতলে ঝরা ফুলে গাঁথিছ মালিকা।
প্রভাত সমীরে আজি পূর্ণ অভিসার
বলো, তুমি পূজারিণী কোন দেবতার?
অনন্ত নিলয় পথে যাপিতে প্রহর
কে তোমাকে নিয়ে এলো চেপে দুই কর!
তরুশাখে পুষ্পরাজি প্রকাশিছে বনে,
কী অনন্ত মধুময় ভ্রমরের সনে।
রঙের ফসল লয়ে প্রজাপতি মন,
উড়ু উড়ু করিতেছে সারা তপোবন।
দলিত ফুলিত বুকে সমীর প্রবাহে,
পাতার আড়ালে বসে বিহগিনী গাহে-
সুমধুর গান। শুনে সে গানের রেশ,
অরুণ চকিতে আনে মধুর আবেশ।
এ আনন্দ মধুময় যূঁথিকার বন,
টেনে আনে পৃথিবীতে মধুর স্বপন।
দখিনা সমীর খোলে পূর্বাশা দ্বার,
অনন্ত কবিত্বপূর্ণ সমস্ত সম্ভার।
দোদুল্য বনলতা দুলিত দোদুল,
কে তুমি বালিকা বসে তুলিতেছ ফুল!
কে তুমি শতধা মনে তুলিছ কমল?
কুড়াতে কুসুম কেন ঝরে আঁখিজল!
মনে কী বাসনা তব পূজিবে দেবতা
আঁখিজলে! নীরবে প্রকাশি কথা!
দেবতার চিরচেনা পূজারি বালিকা
তাই বসে সাজাতেছ অশ্রুমালিকা!
চাঁদ দেখিতে এসেছিলাম, চাঁদ দেখিতে চাঁদ,
সন্ধ্যাকাশে মেঘের পাহাড় বাঁধলো কঠিন ফাঁদ।
দূর আকাশে মেঘের পাহাড় চুমছে যেথা বন,
হঠাৎ বাধা মানলো সেথা স্বপ্নভরা মন।
হিয়ার চোখের কাজল ভেঙে জাগলে নতুন সাধ,
চাঁদ দেখিতে এসেছিলাম, চাঁদ দেখিতে চাঁদ!
চাঁদ দেখিতে এসেছিলাম হয় নি চাঁদের দেখা,
রঙধনুতে মনের আকাশ বাঁধলো নতুন রেখা।
জীবনকলি উঠলো জেগে ফুটলো মনের শতদল,
পদ্ম-আঁখি শিরাব সাকী প্রিয়ার চোখে অশ্রুজল।
আমার মনের আকাশ ছুঁয়ে ডাকলো ময়ূর কেকা,
চাঁদ দেখিতে এসেছিলাম, চাঁদ দেখিতে চাঁদ।
চাঁদ দেখিতে এসে দেখি চাঁদের হাসিটুক,
রাখছে ধরে প্রতিফলন প্রিয়তমার বুক।
ওষ্ঠ-অধর প্রকম্পিত নতুন শিহরণে,
হৃদয় সরোজ জাগলো আমার নতুন জাগরণে।
তাইতো আমার মনের ফাগুন বাঁধলো না আর বাঁধ
চাঁদ দেখিতে এসেছিলাম, চাঁদ দেখিতে, চাঁদ।
আমার এ কবিতাখানি
আজি এ বসন্তে জানি
কারো মনে কাটিবে না এতটুকু দাগ
অথবা বিরহী প্রাণে বসন্তবিরাগ;
তবু জানি, আমার এ তুচ্ছ অবদান
পড়িবে তোমার হাতে
নিশিযামিনী শেষে বসন্তপ্রভাতে।
তাইতো প্রাণের আশায় লুপ্ত ভাষাগুলি
সঙ্গীতের মহারাগে দীপ্ত করে তুলি
তোমার কোমল স্পর্শ অনন্ত মধুর
কী জানি যদিবা পায় এতটুকু সুর!
সুরহারা ভাঙা বীণা কতদিন হায় লুটালো ধূলির বুকে
অনাদরে, কেউ তারে করে নি গ্রহণ,
তিলে তিলে সহিয়াছি স্মৃতির দহন।
আজকে আমার হৃদয় জুড়ে
আলোর ফাগুন জাগলো ওরে
উথলে ওঠে হৃদয়প্রাণ,
একটা গান শোনাবে, গান!!
আজকে আমার নয়নপ্রাতে রঙিন মধুর স্বপ্ন আঁকি
সেই কবেকার হারিয়ে যাওয়া আসলো ফিরে গানের পাখি
তপ্তবালু মরুর বুকে জাগছে গুলিস্তান
একটা গান শোনাবে, গান!!
আজকে মনের মণিকোঠায় নেই যে ব্যথার বেগ
দূর আকাশে তাই বুঝি ওই ডাকলো শ্রাবণ মেঘ
মনের বনে ছড়িয়ে গেল নীরব প্রেমের দান
একটা গান শোনাবে, গান!!
নয়ন যারে পায় নি খুঁজে হাজার রাতের অন্ধকারে
আজকে পেলাম বাহুর পাশে পূর্ণ শশীর অভিসারে
যোগ-বিয়োগে ভুল করেও মিলছে সমাধান
একটা গান শোনাবে, গান!!
পথের মাঝে কুড়িয়ে পেলাম গন্ধরাজের মালা
এবার আমার কুড়িয়ে নেওয়ার পালা,
হারিয়ে ফেলার দিনগুলো মোর
পালিয়ে গেছে দূরে
তাইতো ধূলার পরে
কুড়িয়ে পেলাম সন্ধ্যারাগে
গন্ধরাজের হার-
তাইতো বারংবার
হৃদয়কোণে ভিড় জমালো আনন্দ ঢেউগুলো
এবার আমার কুড়িয়ে নেওয়ার পালা।
কিন্তু একি! ফুলের দলে পরশ দিলে কাঁপন লাগে গায়
এ ফুল যেন কুড়িয়ে কারে চায়,
যেন কোন বিবাগী পথের পাশে
হারিয়ে গেছে তারে
কুঞ্জবনের ধারে
একদা যে কলির বেশে
ঘুমিয়েছিল বোঁটে
আজ সে ধুলোয় লুটে
আসলে ফিরে সেই বিবাগী বাঁধন দিবে পায়
এ ফুল যেন কুড়িয়ে তারে চায়।
পথের মাঝে রেখে এলাম সেই বিবাগীর ফুল
এবার আমার ভাঙলো সকল ভুল
যে ফুল আমি হারিয়ে গেছি
পদ্মানদীর তীরে
পাব না আর ফিরে
… ব্যর্থ হলো সকল আশা ব্যর্থ পথে চলা
এবারও মোর হারিয়ে যাওয়ার পালা।
এইখানে এক রাতের শেষে শিশির-ঝরা প্রাতে
মেললে তোমার ছল, দেবীর দুয়ার হতে
আসলো নিমন্ত্রণ
অলিকূলে ভিড় জমাতে করলো আমন্ত্রণ।
ডাকলো তোমায় দূর আকাশের রাঙা আলোর ফালি
তোমার রঙে রঙ ছড়াতে ভুবন দিল তালি,
রইলে প্রেমের বন্ধনে
শিউলি ঝরা কোন সে রূপে কুঞ্জবনের প্রাঙ্গণে।
ফাগুন এসে বরণ-ডালাখানি পরালো তোর গলে
শরৎ এসে টিপ পরালো শিউলিবনের তলে
মৌমাছিদের গুঞ্জনে
বেলা তোমার ফুরিয়ে গেল কুঞ্জবনের প্রাঙ্গণে।
যদি বলো- আর কোনোদিন লিখবো না
লিখবো না একটি চিঠিও,
আমার চিঠির ধূসর পাণ্ডুলিপি
আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিও।
যদি বলো- আর কোনোদিন লিখবো না।।
যদি বলো- ভুলে যাব অতীতের মশক তাড়ানো রাত,
আর যদি বলো তুমি- তোমাকেই ভুলে যাব অকস্মাৎ
তোমাকেই ভুলে যাব,
স্মরণের চেয়ে ভুলে যাওয়া শ্রেয়- দেখো নি ভুলেছি কত!
নক্ষত্রের আকাশ থেকে ঝরে পড়া একটি তারার মতো
যে আমার কাছে ছিল।
যদি বলো- ভুলে যাব পৃথিবীর গীতিময় সুর,
আর যদি বলো চলে যেতে মোরে- চলে যাব বহুদূর।
যদি তুমি চেয়ে থাকো পাখির নীড়ের মতো চোখ করে ভার,
তবু আমি আসিব না, আসিব না, কোনোদিন আসিব না আর।
শত বেদনার অঙ্কুর বুকে চলিনু বন্ধুগণ
যে কথা কখনো বলিতে পারি নি, বলি তা কিছুক্ষণ।
সেই শুভদিনে লুটাবো ধুলায়- শুনে রাখো মোর বাণী,
যারা ছিলে মোর বন্ধু সুদিনে- ফেলো না চোখের পানি।
অশ্রুতে নয়, ক্রন্দনে নয়, ভালোবাসা দিয়ে মোরে
সুজন বন্ধু তোমরা আমারে বেঁধে রেখো প্রেম-ডোরে।
যেখানে নরম ঘাসের সবুজে নিশীথে জোনাক জ্বলে
বিটপীর শাখে যেখানে পাখিরা অনন্ত কথা বলে,
যেখানে বাতাস ধীরে বহে ধীরে- সন্ধ্যা যেখানে আনে
বন্ধু আমার সুখের বাসর বেঁধে দিও সেইখানে।
যে রাতে চলিব সুদূরের পথে জ্বালিয়ে আগরবাতি
বন্ধু আমার বিদায়-শ্রাদ্ধ করে দিও রাতারাতি।
দিনের আলোকে যন্ত্রণা আনে, রাতের আঁধারে ঘুম,
জোছনার সাথে মঞ্জরীগুলো যখন খাইবে চুম,
গোসল করাতে হবে না বন্ধু, হবে না কাফন দিতে
কখনো তো আর আসিব না এই মানুষের পৃথিবীতে।
আতর-গোলাপ মাখিলে কী হবে, কবরে ঢাকিবে দেহ,
তোমরা যে মোর বন্ধু স্বজন যাইবে না সাথে কেহ।
বাসর শয়নে ঘুমুবো যখন, ঘুমুবো অহর্নিশি,
সে ঘুম ভাঙাতে যাবে না কখনো আজিকার প্রতিবেশী।
রাখি-বন্ধন খুলিবে বন্ধু, আর কিছু আনিবে না,
কী সুখে প্রহর কাটাবো সেখানে কেউ তাহা জানিবে না।
আকাশ মাটিতে ক্লান্ত বালক খেলেছি কত না খেলা,
সবকিছু তার ভুলে যাবো আমি- ভুলে যাবো এই বেলা।
আমি যে ঘুমুবো কবরের দেশে তবু তো আমার লাগি
তারকা ফুটিবে, চন্দ্র উঠিবে আকাশ রহিবে জাগি।
আমাকে খুঁজিয়া ক্লান্ত বাতাস ধানক্ষেতে দিবে নাড়া,
শিয়াল ডাকিবে কবরের পাশে, তবু তো দেবো না সাড়া।
পাষাণ গ্রথিতে বেঁধো না বন্ধু আমার কবরখানা,
শ্রাবণ-মেঘেরা ঢালে যদি জল, আহা কী যে সান্ত্বনা!
জোছনার সাথে ফোটে যদি কভু হাসনাহেনার দল,
নরম ঘাসের সবুজে সবুজে ভরিবে কবরতল।
ঝিঁঝির মেয়েরা কবরের পাশে গাহে যদি কভু গান,
ইঁদুর বেজিরা বুঝে নিবে তবু এখানে কবরস্থান।
আঁধার নিশীথে জ্বেলো না বন্ধু মোম কী মাটির দীপ,
আমি যে কখনো জাগিব না আর ঘুমিয়ে রহিব ক্লীব।
আসিব না আর তোমাদের সাথে কহিতে অনেক কথা
আমি যে বন্ধু বুকে টেনে নিব চিরন্তন নীরবতা।
রাতের আঁধারে ফুটিবে যখন আকাশে অনেক তারা
তারই সাথে মোর জেগে রবে কিছু ছোটো-খাটো বেদনারা।
মৌসুমি বায়ু আনে যদি কভু ফসলের কিছু তান,
তারই সাথে মোর শুনিবে বন্ধু জীবনের কিছু গান।
যে কথা শুনিতে জেগে রবে তুমি রাতের পরেতে রাত
ফাগুনের বনে পাখির কণ্ঠে শুনিবে অকস্মাৎ।
কেউ বুঝে নিবে, কেউ না বুঝে কাঁদিবে সেদিন জানি
তবু অনুরোধ কেঁদো না বন্ধু পুরোনো সে ব্যথা টানি।
যে ব্যথা ভুলিতে চলে গেছি আমি দূর হতে দূর দেশে
তোমরা সে কথা ভুলে যেও ভাই আমাকেই ভালোবেসে।
কেন এত কলরব!
নীরবে এসেছি আমি নীরবেই চলে যাব।
কণ্টকে গেঁথে এনেছি কুসুম পর কুসুম দামিনী,
এখনো জাগে নি কেউ নিশীথ নিঝুম যামিনী।
ফুল নিয়ে সখী জল দাও চোখে – জল নিয়ে ফিরে যাই,
আলোর স্বপন মিটুক আমার আজি এ আঁধারে যদিও হারাই।
বাসনা আমার অঞ্জন মাখা ওই কালো চোখে মন!
নীরব নিঝুম আঁধার নিশিতে চেয়ে থাকি কিছুক্ষণ।
ওই কালো চোখে মায়াবী তোমার কী মায়া জড়ানো যথাযথ
তারই বাসনায় মাঠের শিশিরে প্রতিদিন আঁকি ছায়াপথ।
প্রতিদিন যদি স্বপন জড়ানো এমন নিশীথ হতো-
প্রতিদিন যদি জল দিত কেউ এমনি তোমার মতো-
তাহলে হয়ত জলভরা চোখে হতভাগা এক কবি,
প্রিয়া রূপ তার হারাতো না বুঝি- হৃদয়ে আঁকিত ছবি।
মেয়ে গো – ফুল নিয়ে জল দাও, পুরো হোক মনোরথ
জলভরা চোখে ফিরে যাই আমি শিশিরে ভাঙিয়া পথ।
পথে যেতে যদি প্রজাপতি মেয়ে পথ আগলিয়ে ধরে,
‘আঁখি ভরা কেন এত জল কবি!’ প্রশ্ন যদি বা করে-
যদিবা সহসা রঞ্জিত পাখা আঁচলের মতো তুলে
মুছে যেতে চায় জলের ফোঁইয়ারা সহসা মনের ভুলে!
বাঁধ ভেঙে যাবে, বাঁধ ভেঙে যাবে! অথৈ সাগরস্থিত,
এত জল দেখে প্রজাপতি মেয়ে হবে না নিমজ্জিত।
ভরিবে না সখি এত জল পেয়ে শূন্য মনের কূঁইয়া,
সাহারা মরু কি ধন্য হবে না পেয়ে সে জলের ছোঁইয়া!
সাঁঝের বাগানে কুসুম কুড়ালে ব্যথা পায় অলি প্রাণে,
আমি যে কুসুম আনিয়াছি সখি, সন্ধ্যাতারা তা জানে।
অনেক মিনতি করেছি সখিরে- অনেক মিনতি করে,
কণ্টক দিয়ে কিনেছি কুসুম, এনেছি গো সাজি ভরে।
জল দাও সখী! ফুল দিয়ে জল দাও – আঁখিজল!
কেন এ অনীহা বনফুলে! আঁখি কেন টলমল!
পাষাণের চোখে এত জল কেন! এত জল কেন ওরে!
আজি এ নিশীথে কাঁদিতে এসেছি, কাঁদাতে আসি নি তোরে।
এই দেখো সখী, জল ভরা চোখে ফিরে যায় এক কবি,
যে স্বপনে তার প্রিয়ারে সাজাতো মুছে দিয়ে তার সবই।
কী গভীর দুঃখ নিয়ে শ্রাবণের মেঘ যায় ফিরে,
আমি তো সখীরে বোঝাতে পারি নি- বুঝে নিও আঁখি-নীরে।
ও পাড়ার মেয়েটির শাড়ির আঁচলে
কখন যে বাঁধা পড়ে প্রজাপতি মন
যতো চাই সরে যেতে- ডেকে ডেকে বলে,
ওরে তুই হতভাগা, দাঁড়া কিছুক্ষণ।
সবুজ ঘাসের বনে প্রজাপতি ওড়ে
বিকেলের লাল রোদে রাঙানো অধর,
ও পাড়ার শ্যামলিনী ডাক দেয় দূরে,
হাত নেড়ে ডেকে কয়- আয়, বাঁধি ঘর।
নীড়হারা মন বলে, ধীর পায়ে চলো
ক্লান্তিতে ভরে গেছে অলস অধর
মেয়েটিরে ফিরায়ো না, ওরে কিছু বলো
এমনি তো কেটে গেলো তিরিশ বছর।
ঘরভাঙা মাছরাঙা গাংচিল পাখি
রঙিন মাছের বুকে মেরেছে ঠোকর
প্রজাপতি-মন মোর, নিমীলিত আঁখি
ডেকে কই- ঘরভাঙা, আয়, বাঁধি ঘর।
গাংচিল ডেকে কয়- ঘরমুখো হবি!
সহসা গুটিয়ে পাও মেলে দিয়ে পর
ডেকে ডেকে কয়ে গেলো- ফিরে যাও কবি
কেন আর পিছু ডাকো, কোথা পাবো ঘর!
এ অসীম শূন্যতা, ঘরভাঙা ঝড়
এমনি তো কেটে যায় হাজার বছর।
এখানে নরম মাটি কাদামাখা ঘোলা জল
আমি তো চাই নি সবুজ ফসলের মাঠ
চেয়েছিলাম বাদামি রঙের তামাটে ফসল
এবং অঘ্রাণের শীতের সকাল, উন্মুক্ত কপাট।
ফুল পাখি নদী জল কালো চোখ এলোচুলে
সাজানো হরিৎ ক্ষেত্র সুশোভিত নদীতটে
আমার বাসনা নেই; শুধু বলিষ্ঠ আঙ্গুলে
কাস্তে চেপে এঁকে যাবো ছবি আমার প্রচ্ছদপটে।
পাখি যদি গান গায়, কুমারী ধানের ক্ষেতে
জেগে থাকে প্রজাপতি রাতের শিশিরে
আমি শুধু দেখে যাবো দূর থেকে আলপথে
যেহেতু আমার মন মিশে আছে মাটির গভীরে।
কাঁচা মরিচের সবুজের মতো,
কুমারী ধানের মতো আছো নুয়ে,
আমার হৃদয়ে একান্ত নিবিড় হয়ে, একান্ত নিবিড়;
যেমনি নেতিয়ে থাকে মাচানে
পুঁইয়ের ডগা নিতান্ত স্থবির,
আশ্বিনের সোনাঝরা রৌদ্রটুকু চুয়ে চুয়ে।
তোমাকে দেখেছি আমি কার্তিকের প্রথম ফসলে
শালিকের ভিড়ে, ভাঙা উঠোনের পাশে,
যেখানে চড়ুই বসে বেগুনের ডালে।
কার্তিকের দারুণ রোদ্দুরে যখন কাস্তে হাতে মাঠে নামি,
তোমাকে দেখেছি সেইবেলা,
দেখেছি মাঠের পরে ধানশিষে ফড়িঙের প্রেম-প্রেম খেলা।
নতুন উদ্যমে মনে হয় পৃথিবীটা ধানক্ষেত :
সেখানে শালিকের মতো শুধু তুমি আর আমি।
আহা, কী বিশ্রী মেঘগুলো বার বার দেয় হানা
কাকেরা পালক ঝাড়ে- ভেঙে যায়
সূর্যের সোনালি রোদের ডানা।
প্রবল বর্ষণে কভু মুছে যায় ঘাসের শিশির
আহা, কী কাদায় লুটে সেফালি কুসুম
পথ চেয়ে যেন কোনো দূর প্রবাসীর।
আকাশে মেঘের আনাগোনা, সহসা বৃষ্টি হবে জানি,
নষ্ট করে দিয়ে যাবে সবুজ ঘাসের বনে
চঞ্চল হরিণীর চপল চাহনি।
হতাম যদি আমি কোনো গাঁও গেরামের চাষা
মাটির সাথে থাকতো আমার নিগূঢ় ভালোবাসা।
নদীর পারে থাকতো আমার ছোট্ট সোনার গাঁও
উজান-ভাটি স্রোতের টানে চলতো আমার নাও।
মাঠের পাশে থাকতো পাতা মাচান-বাঁধা খড়
বাড়ির পাশে থাকতো আমার ছোট্ট গোয়ালঘর।
গোয়াল ভরা থাকতো গরু আথাল ভরা গাই
সারা গাঁয়ের মানুষ আমায় ডাকতো কৃষান ভাই।
লাঙ্গল কাঁধে মাঠে যেতাম সূর্য ওঠার আগে
স্বপ্ন আমার সফল হয়ে ফুটতো নবীন রাগে।
সমাপ্ত
Texte: Khalil Mahmud
Bildmaterialien: Khalil Mahmud
Cover: Khalil Mahmud
Lektorat: Khalil Mahmud
Übersetzung: Khalil Mahmud
Satz: Khalil Mahmud
Tag der Veröffentlichung: 26.08.2020
Alle Rechte vorbehalten
Widmung:
This book is edited by Khalil Mahmud